সম্পাদনায় : হাফিয মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার

শবে বরাত সমর্থনে ২২টি সহিহ হাদিস আছে, যারা অস্বীকার করে তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন তারপরও কি মেনে নিবেন না? কোনও মুসসলমান কি সহিহ হাদিস অস্বীকার করতে পারে? না কখনোই না। পবিত্র শবে বরাতের সমর্থনে ২২টি সহিহ হাদিস নিম্নে দেওয়া হল। তারপরও যদি অস্বীকার করে সেটা তাদের ব্যাপার।
হাদিস নাম্বার : ০১
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি কি এ রাত তথা শাবানের ১৫তম রজনী সম্পর্কে কিছু জান? তিনি আরজ করলেন এ রাতে কি রয়েছে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এ রাতে যে সকল বনী আদম জন্মগ্রহণ করবে, তাদের নাম চুড়ান্ত করা হবে, আর যে সকল বনী আদম মৃত্যুবরণ করবে তাদের নামও লিপিবদ্ধ করা হবে। এ রাতে তদের পুরো বছরের আমলসমূহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে পেশ করা হবে, আর এ রাতে তাদের রিজিক/জীবিকা নির্ধারণ করা হবে। অতপর তিনি আরজ করলেন, নিশ্চই আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতিত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চই আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতিত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, তিনি এ বাক্য তিনবার বলেন। অতপর তিনি আরজ করলেন, আপনিও হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাত মুবারক মাথা মুবারকের উপর রেখে ইরশাদ করেন, নিশ্চই আমি আল্লাহর রহমতের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করব। এ বাক্য তিনি তিনবার ইরশাদ করেন।
তথ্যসূত্র : বায়হাক্বী শরীফ, দাওয়াতে কবীর, হাদীস নং-৫৩০; মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং-১১৫, হাদীস নং-১৩০৫।
হাদিস নাম্বার : ০২
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘরে পেলাম না বা তাঁর খোঁজে বের হলাম। তখন দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাক্বী কবরস্থানে আসমানে মাথা মুবারক উত্তোলন করে অবস্থান করছেন। আমাকে সেখানে দেখে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি এ ভয় করছ যে, আল্লাহ তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার প্রতি অবিচার করবে? তিনি আরজ করলেন আপনি বলছেন, এমন কিছু আসলে আমার মনে নেই; বরং আমি ধারণা করেছি যে, আপনি আপনার কোন স্ত্রীর হুযরায় তাশরীফ নিয়েছেন। তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা শাবানের পনেরতম রাতে প্রথম আসমানে তাশরীফ আনেন। অতঃপর বনী ক্বলব-এর মেষগুলোর লোম এর সংখ্যার চেয়েও অধিক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।
তথ্যসূত্র ঃ ইবনে মাজা শরীফ, হাদীস নং-১৩৮৯; জামে আত তিরমিযি-৭৩৯; মুসনাদে আব্দ বিন হুমায়দ-১৫০৯; মুসান্নাফে আবী শায়বাহ-২৯৮৫৮; মুসনাদে আহমদ-২৬০১৮, ২৬০৬০; বায়হাক্বী ফাযাযিলুল আওকাত-২৮; শোআবুল ঈমান-৩৫৪৩, ৩৫৪৪, ৩৫৪৫; আন নুযুল দারে কুতনী-৯০; বগভী শরহুস সুন্নাহ-৯৯২; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০২; তাফসীরে রূহুল মাআনী, সুরা দুখান ১৮:৪২৩/১৩:১১০; তাফসীরে কাশশাফ, সুরা দুখান, ৪:২৭০; তাফসীরে কবীর, সুরা দুখান ২৭:৬৫৩।
হাদিস নাম্বার : ০৩
হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রাযিল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন শাবানের পনেরতম রাত হয়, তখন তোমরা রাতে নামাজ পড় এবং রোজা রাখ। কেননা ঐ দিন সূর্যাস্তের সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে তাশরীফ এনে বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেউ আছ, আমি তাকে ক্ষমা করব, রিজিক আন্বেষণকারী কেউ আছ, আমি তাকে রিজিক দিব, অসুস্থ কেউ আছ, আমি তাকে সুস্থতা দান করব, এভাবে অন্যান্য বিষয়েও বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত।
তথ্যসূত্র : ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮; ফাকেহী আখবারে মক্কা-১৮৩৭, ৩:৮৪; বায়হাক্বী ফাযাযিলুল আওকাত-২৪; শোআবুল ঈমান-৩৫৪২; মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-১১৫, হাদীস নং-১৩০৮; কানযুল উম্মাল-৩৫১৭৭; তাফসীরে রূহুল মাআনী, সুরা দুখান, ১৮:৪২৪/১৩:১১০; তাফসীরে কুরতুবী, সুরা দুখান ১৬:১২৭।
হাদিস নাম্বার : ০৪
হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালা শাবানের পনেরতম রাতে স্বীয় সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং মুশরিক, হিংসুক ব্যতীরেকে সবাইকে ক্ষমা করেছেন।
তথ্যসূত্র : তাবরানী মুজামুল আউসাত হাদীস নং-৬৭৭৬; মুজামুল কবীর-২০:১০৮, ২১৫; মুসনাদে শামেয়ীন-২০৩, ২০৫, ৩৫৭০; ইবনে আসেম আস সুন্নাহ-৫১২; সহীহ ইবনে হিব্বান-৫৬৬৫; বায়হাক্বী ফাযাযিলুল আওকাত-২২; শোআবুল ঈমান হাদীস নং-৩৫৫২, ৬২০৪; দারে কুতনী আন নুযুল-৭৭; হায়ছামী মাজমাউজ যাওয়াযিদ-১২৯৬০; আলবানী সহীহ আত তারগীব ওয়াত তাহরিব-১০২৬, ২৭৬৭; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০৩, কানযুল উম্মাল-৩৫১৮০।
হাদিস নাম্বার : ০৫
হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা শাবানের পনেরতম রাতে সৃষ্টির প্রতি কৃপা দৃষ্টি দেন এবং সকলকে ক্ষমা করেন, মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীরেকে।
তথ্যসূত্র : ইবনে মাজা শরীফ হাদীস নং-১৩৯০; ইবনে আসেম আস সুন্নাহ-৫১০; বায়হাক্বী ফাযাযিলুল আওকাত-২৯; দারে কুতনী আন নুযুল-৯৪; কানযুল উম্মাল-৩৫১৭৫; আলবানী সহীহুল জামে-১৮১৯; হাদীসটি হাসান/সহীহ লিগাইরিহি।
হাদিস নাম্বার : ০৬
হযরত আবুবকর সিদ্দীক রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন পনেরই শাবানের রাত হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে তশরীফ আনেন এবং সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, মুশরিক ও অপর ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত।
তথ্যসূত্র : মুসনাদে বাযযার ১:২০৬, হাদীস নং-৮০; ইবনে আসেম আস সুন্নাহ-৫০৯; দারে কুতনী আন নুযুল-৭৫, ৭৬; ইবনে খুযাইমাহ আত তাওহীদ-৪৮; আলী মুরুযী মুসনাদে আবুবকর সিদ্দীক রা.-১০৪; আবু নুয়াইম তারিখে ইস্পাহান-২:২; হায়ছামী মাজমাউজ যাওয়াযিদ-১২৯৫৭; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০৩।
হাদিস নাম্বার : ০৭
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা শাবানের পনেরতম রাতে সিদ্ধান্তসমূহ চুড়ান্ত করেন এবং শবে ক্বদরে তা বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের সোপর্দ করেন।
তথ্যসূত্র : তাফসীরে খাজিন ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ১১২/১১৬; তাফসীরে বগভী আল ইহিয়ায়ুত তুরাস, ৪:১৭৪, সুরা দুখান; তাফসীরে কুরতুবী, ১৬:১২৭, সুরা দুখান; ইবনে আদিল আল লুবাব ফি উলুমিল কিতাব-১৭:৩১১।
হাদিস নাম্বার : ০৮
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন পাঁচটি রাত আছে যে রাতগুলোয় দুআ ফেরত হয়না। ওইগুলো হল জুমুআর রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত এবং দুই ঈদের রাত অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত।
তথ্যসূত্র : মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, কিতাবুস সিয়াম হাদীস নং-৭৯২৭; বায়হাক্বী শোআবুল ঈমান-৩৪৪০; ফাযাযিলুল আওকাত-১৪৯।
হাদিস নাম্বার : ০৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ আযযা ওয়াজাল্লা শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে স্বীয় মাখলুকের প্রতি রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। অতঃপর দু’শ্রেণির বান্দা ব্যতীত সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তারা হল মুসলমান ভাইয়ের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী এবং অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকারী।
তথ্যসূত্র : মুসনাদে আহমদ-৬৬৪২; আত তাগরীব; হায়ছামী মাজমাউজ যাওয়াযিদ-১২৯৬১; তাফসীরে রূহুল মাআনী, সুরা দুখান, ১৮:৪২৩/১৩:১১০।
হাদিস নাম্বার : ১০
হযরত কাসীর বিন মুররাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, শাবানের মধ্য রাত্রিতে আল্লাহ আযযা ওয়াজাল্লা মুশরিক ও কলহকারী ব্যতীত সকল দুনিয়াবাসীদের ক্ষমা করে দেন।
তথ্যসূত্র : বায়হাক্বী শোআবুল ঈমান হাদীস নং-৩৫৫০; আলবানী সহীহ আত তারগীব ওয়াত তাহরিব-২৭৭০।
হাদিস নাম্বার : ১১
হযরত কাসীর বিন মুররাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, শাবানের মধ্য রাত্রিতে আল্লাহ আযযা ওয়াজাল্লা আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং মুশরিক ও কলহকারী ব্যতীত সকল ক্ষমাপ্রার্থী দুনিয়াবাসীদের ক্ষমা করে দেন।
তথ্যসূত্র : মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, কিতাবুস সাওম-৭৯২৩; মুসান্নাফে আবী শায়বাহ-২৯৮৫৯; আন নুযুল দারে কুতনী-৮২, ৮৩, ৮৪; বায়হাক্বী শোআবুল ঈমান হাদীস নং-৩৫৫০, ৩৫৪৯।
হাদিস নাম্বার : ১২
হযরত আবু সায়লাবা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন পনেরই শাবানের রাত হয়, আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং মুমিনদের ক্ষমা করে দেন ও কাফিরদের অবকাশ দেন। আর হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারীদের আহ্বান করেন অবকাশ দেন (তাওবার জন্য), যতক্ষণ তাদের হিংসার কারণে তারা তার নিকট তওবা না করে।
তথ্যসূত্র : বায়হাক্বী শোআবুল ঈমান হাদীস নং-৩৫৫১; ইবনে আসেম আস সুন্নাহ-৫১০; তাবরানী আল মুজামুল কবীর ২২: ২২৩, ২২৪, হাদীস নং-৫৯০, ৫৯৩; বায়হাক্বী আস সুনানুস সগীর-১৪২৬; ফাযাযিলুল আওকাত-২৩; দার কুতনী আন নুযুল-৭৮, ৮১; হায়ছামী মাজমাউজ যাওয়াযিদ ১২৯৬২; আলবানী সহীহ আত তারগীব ওয়াত তাহরিব ২৭৭১; সহীহুল জামে ৭৭১; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০৩, কানযুল উম্মাল-৩৫১৮৩।
হাদিস নাম্বার : ১৩
হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন পনেরই শাবানের রাত হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, মুশরিক ও অপর ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত।
তথ্যসূত্র : মুসনাদে বাযযার ১৬:১৬১ হাদিস নং-৯২৬৮; হায়ছামী মাজমাউজ যাওয়াযিদ ১২৯৫৮; নুজহাতুল মাজালিস ওয়া মুনতাখাবুন নাফাইস, বাব ফাদলু শাবান ওয়া ফাদলু সালাতুত তাসবীহ, ১:১৪৬/১:১৬১।
হাদিস নাম্বার : ১৪
হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা রাতে সালাত আদায় করছিলেন। তিনি সিজদায় গিয়ে দীর্ঘ সময় সিজদায় থাকলেন। এমনকি আমার মনে হলো যে, তাঁর ওফাত হয়ে গেছে। আমি যখন এমনটি দেখলাম, তখন শোয়া থেকে উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলী নাড়া দিলাম, ফলে তিনি নড়ে উঠলেন। তখন আমি (বিছানায়) ফিরে গেলাম। অতঃপর যখন তিনি সিজদা থেকে মস্তক উঠালেন এবং নামায শেষ করলেন, তখন বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি মনে করেছিলে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার সাথে প্রতারণা করছেন? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ, আমি এমনটি মনে করিনি। বরং আপনার দীর্ঘ সিজদার কারনে আমার মনে হয়েছে যে, আপনার ওফাত হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, তুমি কি জান এটি কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবগত। তিনি বললেন এটি মধ্য শাবানের রাত। আল্লাহ তায়ালা এ রাতে তার বান্দাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকে ক্ষমা করেন, যারা দয়া প্রার্থনা করে তাদেরকে দয়া করেন এবং যারা বিদ্বেষী তাদেরকে তাদের অবস্থাতেই রেখে দেন।
তথ্যসূত্র : বায়হাক্বী শোয়াবুল ঈমান-৩৬৭৫/৩৫৫৪; ফাযাযিলুল আওকাত-২৬; সুয়ুতী আদ দুররুল মানসুর, সুরা দুখান, ৭:৪০৩।
হাদিস নাম্বার : ১৫
হযরত আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, চারটি রাত এমন রয়েছে যেগুলোর ফযিলত তাদের দিনের ন্যায় দিনের ফযিলত রাতের ন্যায়। যাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাহদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেন, তাঁর বান্দাদের মুক্ত করেন এবং অফুরন্ত নিয়ামত প্রদান করেন। তা হল, কদরের রাত ও তার পরবর্তী দিন, আরাফার রাত ও তার পরবর্তী দিন, শাবানের মধ্য রাত্রি (শবে বরাত) ও তার পরবর্তী দিন, জুমআর রাত ও তার পরবর্তী দিন।
তথ্যসূত্র : দায়লামি, কানযুল উম্মাল-৩৫২১৪; সুয়ুতী জামেউল আহাদীস-৩০৮০।
হাদিস নাম্বার : ১৬
হযরত উসমান বিন আবীল আ’স রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন পনেরই শাবানের রাত হয়, তখন আহ্বানকারী আহ্বান করবে এই বলে, আছে কেউ মুক্তিকামী গুনাহ হতে? তাকে ক্ষমা করা হবে। কেউ আছে যে কিছু চাইবে তাকে তা দান করা হবে। প্রত্যেক কামনাকারীকে প্রদান করা হবে শুধুমাত্র মুশরিক ও ব্যভিচারকারী মহিলা ব্যতীত।
তথ্যসূত্র : বায়হাক্বী শোআবুল ঈমান হাদীস নং-৩৫৫৫; ফাযায়েলু আওকাত-২৫; কানযুল উম্মাল-৩৫১৭৮; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০৩।
হাদিস নাম্বার : ১৭
আতা বিন ইয়াসার রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, শাবানের মধ্য রজনীতে (শবে বরাতে) মানুষের হায়াত পূর্ণ করা হয়। অথচ লোকটি ভ্রমণকারী হিসেবে বের হয়েছে, এমতাবস্থায় তার হায়াত পূর্ণ করা হয়েছে এবং মৃত্যু তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং বিবাহ করেছে এমতাবস্থায় তার হায়াত শেষ করা হয়েছে ও মৃত্যু তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ জীবন, মৃত্যু ইত্যাদি এ রাতে নির্ধারিত হয়।
তথ্যসূত্র : মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, কিতাবুস সাওম-৭৯২৫; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০৩।
হাদিস নাম্বার : ১৮
হযরত ইকরামা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি সুরা দুখানের আয়াত (এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ কাজের ফয়সালা দেওয়া হয়। আয়াত-৪-এর তাফসীরে বলেন, শাবানের মধ্য রজনীতে আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী বছরে যে সকল ঘটনা সংগঠিত হবে (বাজেট) তা লিপিবদ্ধ করবেন, যারা মৃত্যুবরণ করবে তাদের মধ্য থেকে কারো কারো হায়াত বৃদ্ধি করা হবে এবং যারা আল্লাহর পবিত্র গৃহের তাওয়াফ করবে অর্থাৎ হজ্জ্ব আদায় করবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হবে। অতঃপর কোন কিছু বৃদ্ধি পাবে না এবং তাদের মধ্য হতে কমতিও হবে না।
তথ্যসূত্র : সুয়ুতী আদ দুররুল মানসুর, সুরা দুখান, ৭:৪০১; শিহাব উদ্দীন আলুসী রুহুল মাআনী, সুরা দুখান, ১৩:১১২/১৮:৪২৭; ইবনে জারীর তাবারী তাফসীরে ত্ববারী জামেউল বয়ান, সুরা দুখান, ২২:১০; তাফসীরে সালাবী ৮:৩৪৯; তাফসীরে বগভী, সুরা দুখান ৪:১৭৩; তাফসীরে মাযহারী ৮:৩৬৮।
হাদিস নাম্বার : ১৯
উসমান বিন মুগীরাহ বিন আখফাশ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, শবে বরাতে এক শাবান হতে আর এক শাবানের মধ্যকার হায়াত কর্তন করা হয়। অথচ মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, সন্তান সন্ততি জন্ম দেয়, এমতাবস্থায় তার নাম মৃত্যুর তালিকায় নেয়া হয়। (হাদিসটি হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতেও বর্ণিত হয়েছে।)
তথ্যসূত্র : বায়হাক্বী শোআবুল ঈমান হাদীস নং-৩৫৫৮; শিহাব উদ্দীন আলুসী রুহুল মাআনী, সুরা দুখান, ১৩:১১২/১৮:৪২৭; ইবনে জারীর তাবারী তাফসীরে ত্ববারী জামেউল বয়ান, সুরা দুখান, ২২:১০; কানযুল উম্মাল-৪২৭৮০; তাফসীরে সালাবী ৮:৩৪৯; তাফসীরে খাজিন ৪:১১২/১১৬; শওকানী ফাতহুল ক্বাদীর, সুরা দুখান, ৪:৬৫৫; সুয়ুতী জামেউল আহাদীস-১০৯১৭; দায়লামী ২:৭৩-২৪১০; তাফসীরে বগভী সুরা দুখান ৪:১৭৪; তাফসীরে মাযহারী ৮:৩৬৮; সুয়ুতী আদ দুররুল মানসুর, সুরা দুখান, ৭:৪০১; শওকানী ফাতহুল ক্বাদীর, সুরা দুখান ৪:৬৫৫; মুসনাদে দায়লামী-২৪১০।
হাদিস নাম্বার : ২০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। শাবানের মধ্য রজনীতে যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা করা হয় এবং উহা রমযানের ২৭ তারিখ ক্বদরের রাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দায়িত্বশীলদের নিকট সোপর্দ করা হয়।
তথ্যসূত্র : শিহাব উদ্দীন আলুসী রুহুল মাআনী, সুরা দুখান, ১৩:১১২/১৮:৪২৭।
হাদিস নাম্বার : ২১
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্য রজনীতে যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা করেন এবং উহা ক্বদরের রাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দায়িত্বশীলদের নিকট সোপর্দ করেন।
তথ্যসূত্র : তাফসীরে বগভী, সুরা দুখান ৪:১৭৪; তাফসীরে খাযিন, সুরা দুখান ৪:১১৬, আল লুবাব ফি উলুমিল কিতাব ১৭:৩১১; তাফসীরে মাযহারী ৮:৩৬৮।
হাদিস নাম্বার : ২২
হযরত আবু উমামাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন পাঁচটি রাত আছে যে রাতগুলোয় দু’আ ফেরত হয়না। ওইগুলো হল জুমুআর রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত এবং দুই ঈদের রাত অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত।
তথ্যসূত্র : সুয়ুতী জামেউল আহাদীস-১১৯৭৯; দায়লামী।